ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার এইড ইউকে এবং ড্রিমস স্পোর্টস ক্লাব দক্ষিণ বনশ্রী এর আর্থিক সহযোগিতায় শনিবার সারাদিন ফেনী জেলার পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার দুর্গত এলাকার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ছাগলনাইয়ার বাংলা বাজারে বন্যা কবলিত ৬১ পরিবার, ছাগলনাইয়ার চম্পকনগরে বন্যাকবলিত ৫২ পরিবার, পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামের ভূইয়া বাড়িতে বন্যাকবলিত ১০০ পরিবার, পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নোয়াপুর গ্রামের বন্যাকবলিত ৪৬ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। নওয়াপুর গ্রামটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনগরের একেবারেই লাগোয়া। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি এই অঞ্চল সহ পরশুরামের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফেনী জেলার মুহুরী নদীর ভাঙ্গনের ফলে পরশুরাম থানার অলকা গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়ে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী অলকা ভূইয়াঁ বাড়ীর পরিস্থিতি খুবই করুন। ত্রাণ বিতরণে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার এইড ইউকে এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের দফতর সম্পাদক জনাব মোঃ আবু বকর, ড্রিমস স্পোর্টস ক্লাব দক্ষিণ বনশ্রীর সভাপতি জনাব ইয়াকুব আলী, ফেনী জেলার বিশিষ্ট আলেম জনাব হাফেজ ক্বারী মাওলানা আব্দুল কাদের, ড্রীমস স্পোর্টস ক্লাবেৱ অর্থ সম্পাদক জনাব মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জনাব মেজবাহ উদ্দিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব জাহিদ হোসেন, সদস্য জনাব আবুল কালাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অলকা ইউনিটের সেক্রেটারি জনাব হাফেজ মাওলানা সালাউদ্দিন সহ প্রমুখ। রিলিফ সামগ্রীর প্রতিটি প্যাকেটে ছিল পাঁচ কেজি মিনিকেট চাল, দুই কেজি আটা, এক কেজি সয়াবিন তেল, দুই কেজি আলু, এক কেজি পেয়াজ, এক কেজি লবণ, এক কেজি ডাল, আধা কেজি চিনি, এক ডজন দিয়াশলাই, এক বক্স মশার কয়েল, একপাতা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, চারটি ওরস্যালাইন ও একটি ডেটল সাবান।
এই মহতী উদ্যোগে ড্রীমস স্পোর্টস ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব জাকির হোসেন মোল্লা, সম্মানিত উপদেষ্টা জনাব মাহাবুব হোসন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ক্রীড়া সম্পাদক জনাব মাসুদ আলম অভি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আকবর বাদশা, ইলিয়াস হোসাইন, জনাব সাইফুল ইসলাম, জনাব খলিলুর রহমান, জনাব ইন্জিনিয়ার শাহিনুর রহমান, জনাব ইন্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ, জনাব ইন্জিনিয়ার মোতালেব, জনাব মোঃ মোস্তফা, জনাব মাষ্টার হুমায়ুন, জনাব হেলাল উদ্দিন, জনাব মোঃ মাসুদ সহ ক্লাবের সকল সদস্যরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।
খাদ্য সামগ্রী উপহার পেয়ে বানবাসী মানুষের মধ্যে আনন্দের হাসি ফুটে উঠে। তবে রাস্তার দু’ধারেই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুদের সামান্য ত্রাণের জন্য অধির অপেক্ষমান দেখা গেছে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষনীয় যে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মানুষ এখনো কোন সহায়তা পায়নি। প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা গেলেও অধিকাংশরাই প্রধান সড়ক বা সুবিধাজনক স্থানে ত্রাণ বিতরন করছেন।
বন্যার পানি চলে গেলেও প্রচুর ক্ষত রেখে গেছে অনেক যা এখনো শুকায়নি। ভারত থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানিতে নিজের বসবাসের একমাত্র মাটির ঘর ভেঙে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া পরশুরামের নোয়াপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী জসীমউদ্দীন এখন একেবারেই অসহায়। বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘরের চাল কোনমতে ধরে রেখেছেন। কিন্তু সেখানে বসবাস করার কোন সুযোগ নেই। হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদের বলেন বন্যায় ধেয়ে আসা পানির সাথে বালু এসে আমাদের পুকুর গুলো ভরাট হয়ে গেছে। বালু এসে চাষের জমি একেবারে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ বিশাল ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার উপায় আমরা দেখছি না। পরশুরামের অলকা গ্রামের মরহুম জাহাঙ্গীর ভূইয়ার পরিবারে তার প্যারালাইজড বিধবা স্ত্রী এবং তার চার চারটি কম বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা পড়াশোনা করছে। তাদের পরিবারের কোনো ইনকাম নেই অথচ এবারের বন্যায় তাদের ঘরের ভিতরে প্রায় দুই ফুট কাদা বালু মিশ্রিত মাটি। বসবাসের ফার্নিচার সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরটি সংস্কারের জন্য এই পরিবারের আর্থিক অবলম্বন একেবারেই নেই।
এর আগে শুক্রবার রাতে বন্যা দুর্গত এলাকার বানভাসি মানুষের জন্য খাবার সামগ্রী দক্ষিণ বনশ্রীতে প্যাকিং কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক জনাব তরিকুল ইসলাম বলেন আমাদের অতীত সাক্ষ্য দেয় ছাত্র জনতা একসাথে কাজ করলে কোন দুর্যোগেই আমাদের আটকে রাখতে পারবেনা। আকষ্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশ্বে দাড়ানোর জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। গত জুলাই বিপ্লবে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল পেতে বর্তমান সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা জন্য দেশের সকল নাগরিকের প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন দেশের আপামর জনসাধারণকে সাথে নিয়ে ছাত্র জনতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বন্যা কবলিত মানুষের পাশ্বে দাড়ানোর জন্য ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার এইড ইউকে এবং ড্রিমস স্পোর্টস ক্লাব দক্ষিণ বনশ্রীকে ধন্যবাদ জানান।