মোঃ সানাউল্লাহ্ রিয়াদ – ‘সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা, তাদের এই বড় উৎসব দুর্গাপূজার আয়োজন করেছেন এবং উদ্যাপন করছেন, তাদের কাছে আমাদের বক্তব্য হল যে, সশস্ত্রবাহিনী অর্থাৎ নৌবাহিনী এখানে (বরগুনা জেলায়) আছেন, তার সাথে স্থানীয় প্রশাসন আছেন, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড এবং আনসার বাহিনীর সাথে মিলে আমরা এই পূজাটাকে যাতে সার্বজনিনভাবে উদ্যাপন করা যায়, কোনো বিশৃঙ্খলা না সৃষ্টি হয়, সেজন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।’
‘আমরা কিন্তু ভোলা জেলা, বরগুনা জেলা ও খুলনার কিছু অংশ মিলে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। সেই কারণেই আমরা এখানে আগের চাইতে লোকবল বৃদ্ধি করেছি। আমাদের নৌবাহিনীর প্রধান ব্যক্তিগতভাবে আমাদের যে কার্যকলাপ তদারকি করছেন এবং আমরা আশা করি এসকল বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে যে ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি, তাতে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সন্তুষ্ট। আপনাদের (সাংবাদিকদের) সহযোগিতা এবং আপনাদের বরগুনা জেলার যে পূজা কমিটির যিনি সভাপতি রয়েছেন, তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তার যেসকল স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন এবং আমাদের যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে সবাই মিলে শান্তি-শৃঙ্খলা ও অন্যান্য যে নিরাপত্তা আছে সেগুলো রক্ষায় একসাথে কাজ করব।’
মঙ্গলবার (৮অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বরগুনার সার্বজনীন আখড়া বাড়ি মন্দির পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ শেষে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বরগুনা জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রেস ব্রিফিং কালে নৌঅঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক, (জি), এনজিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি, বিএন এসব কথা বলেন।
আখড়া বাড়ি মন্দির পরিদর্শনের আগে দুর্গাপূজার উদ্বোধনী চন্ডী পাঠ করেন আখড়া বাড়ি পূজা মন্ডপের পুরোহিত সুমন ভট্টাচার্য। এসময় সার্বজনিন আখড়া বাড়ি পূজা কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জীব সমাদ্দার এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম ও পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম খলিল।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর যুগ্ম পরিচালক জিল্লুর রহমান, নৌবাহিনীর কমান্ডার মোঃ আমিনুল ইসলাম, লেঃ কমান্ডার সিদ্দিক হাসান, র্যাবের লেঃ কমান্ডার মুহতাসিম, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শামীম মিঞা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবদুল হালিম, জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের জেলা কমান্ড্যান্ট উজ্জ্বল কুমার পাল, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ সহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
তিনি সফরের অংশ হিসেবে বরগুনা সদর উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন।
আখড়া বাড়ি মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংকালে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়, এ ব্যাপারে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে কতটা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন, সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক বলেন- ‘এই ধরণের অভিযোগ আসলে সবসময়ই করে আসছেন, কিন্তু আমাদের নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের জাহাজ আমাদের সমুদ্র সীমায় সবসময়ই টহল দিয়ে থাকেন। আমাদের মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে, এর জন্য জেলেদের একটি বিশেষ সহায়তাও দেয়া হয়। আমাদের যে জাহাজগুলো এবং মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অধিনে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে এ সহায়তাটা দেয়া হয়। আমি সবার কাছে এই আবেদন করব যে এই সময়ে (২২ দিন) আমরা একটু ধৈর্য ধরি। আমরা চেষ্টা করব, অবশ্যই বাধা দেব। যাতে অন্য কেউ এসে আমাদের এলাকায় মাছ ধরতে না পারে। সেটা আমরা নিশ্চিৎ করব। ২২ দিন পর নদীতে কিংবা সাগরে নামলে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ আবার আমরা ধরা শুরু করব এবং দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে আমাদের জেলেরা সক্ষম হবে বলে আশা করি।’
ভারতের অনেক জেলেরা বন্যার সময় ভেসে গিয়ে ভারত সীমায় অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করায় ভারতের বিভিন্ন জেলে আটক রয়েছে। তাদের উদ্ধারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহায়তা থাকবে কিনা কিংবা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন; এমন প্রশ্নের জাবাবে নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল বলেন- ‘যেহেতু একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাজটি করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই জাতীয়ভাবে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী মিলে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, তার সাথে আলোচনা করে যেকোনো জেলে যদি ভারতে আটকা পড়ে তাদের সবাইকেই ফিরিয়ে আনা হবে পর্যায়ক্রমে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনে আপনারা যদি জানান যে কেউ স্থানীয়ভাবে জেলে নিখোঁজ রয়েছে। আমরা সরকারের সাথে আলোচনা করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে জেলেদের ফিরিয়ে আনার অবশ্যই সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব।