দুর্গাপুর প্রতিনিধি- রাজশাহীর দুর্গাপুরে উঠতে শুরু করেছে সুমিষ্ট খেজুরের রস থেকে তৈরি পাটালী গুড় ও ঝোলা গুড়। তবে ভেজাল গুড়ে ছয়লাব হয়ে গেছে বাজার। গুড়ের রং সুন্দর ও গঠন শক্ত করতে বাড়তি মুনাফার আশায় নানান অজুহাতে ভেজাল মেশাচ্ছেন চাষীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারি ক্রেতাদের মাধ্যমে ভেজাল গুড় ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারন মানুষ।
জানা গেছে, শীত মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। বাঙ্গালির কাছে পিঠাপুলি তৈরির অন্যতম উপকরণ খেজুর গুড়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু-বৃক্ষ বলে খ্যাত ‘খেজুর গাছ’কে ঘিরে জনপদে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত। শীত মৌসুমে খেজুর রস দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস ইত্যাদি নিয়ে গ্রামবাসীরা অতিথিদের আপ্যায়ন করতেন। ভেজাল গুড়ের প্রভাবে হারাতে বসেছে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সৌখিন ক্রেতারা।
উপজেলা সদরের সিংগা বাজার, কানপাড়া হাট, আমগাছী বাজার, আলীপুর বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুর গুড় ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ভেজাল এসব গুড়। নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় গলিয়ে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকিরি, পাথুরে চুন ও বিশেষ গাছের ছালের গোড়া দিয়ে পাটালি গুড় তৈরি করা হয়, এসব ভেজাল গুড়। গুড়ের চাহিদা ও উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে প্রতি ১০ লিটার দুই কেজি চিনি মেশানো হয়। গুড়ের রং লাল টকটকে ও গুড় শক্ত করতে মেশান হয় ভেজাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষী জানায়, এখন শীত কম শুধু রস জাল দিয়ে গুড় জমাতে অনেক সময় লাগবে নরম কালচে বর্ণের গুড় তৈরী হবে। যা বাজার নিয়ে গেলে পাইকারি ক্রেতারা নিতে চায় না স্বল্প দামে বিক্রি করা লাগে। অন্যদিকে চিনি ও আরো কিছু উপাদান মেশালে গুড় অনেক শক্ত সুন্দর রং আসে। বাজারে নিয়ে গেলে মুহূর্তেই ভালো দামে বিক্রি করা যায়। শীত কম থাকায় রস কম পড়ে তাই খরচ পোষাতে চিনি মিশিয়ে বাজারজাত করি। এতে তেমন ক্ষতির কিছুই তো দেখি না। চিনি বাজার থেকে মানুষ কিনেই খায় গুড়ের ভেতর খেলে কি হবে।
গুডের পাইকারি ক্রেতা আহাদ আলী জানান, চিনে মুক্ত গুড় বাজারে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ চাষী চিনি হাইড্রোজ মারা গুড নিয়ে আসে। এগুলো এখান থেকে কিনে ঢাকায় পাঠাই। ভেজালমুক্ত গুড আমরা চিনি। শতকরা দুই একজন চাষী এমন গুড় নিয়ে আসে যা স্থানীয়রা কিনে নেয়। তবে এর চাহিদা ঢাকার বাজারগুলোতে নেই। বাহিরের ক্রেতারা চকচকে গুড় পছন্দ করেন কালচে বর্ণের গুড় ভেজাল মনে করেন।
দুর্গাপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেহেদী হাসান (সোহাগ) জানান, মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ ব্যবহারে মানব দেহে ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভারের রোগ, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, আলসার সহ আরো নানাবিধ রোগ হতে পারে।
উপজেলা স্যানিটারি অফিসার আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামছুদ্দিন জানান, গুড় উৎপাদনকারীদের সঙ্গে আমরা একটি সভা করেছি ভেজাল গুড় উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছি। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে এবং যেখানে উৎপাদন হয় সেখানেও মনিটরিং করা হবে। ভেজালের প্রমাণ মিললে মামলা দায়ের করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাবরিনা শারমিন জানান, ভেজাল গুড় তৈরীর রোধে উপজেলার উল্লেখযোগ্য চাষীদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ভেজাল গুড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো বর্ণনা করা হয়েছে।