আন্তর্জাতিক মেলা নামে অভিহিত হলেও বিগত ২৮ টি মেলায় প্রবেশের জন্য আগেকার দিনের কাগুজে টিকেট ব্যবহার করা হতো, যা আন্তর্জাতিক মেলার আবহের সাথে মানানসই ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দর্শনার্থী ও বিনিয়োগকারীরা মেলায় প্রবেশের এমন ব্যবস্থাপনা দেখে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে সন্তষ্ট হতে পারতেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবারের ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ই–টিকেট প্রচলন করার মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করলো।
এবারের মেলায় ই–টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে ডিজি ইনফোটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান । আর প্রতিষ্ঠানটির সাথে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ডিজি ই-পে নামের সহযোগী আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল টেলিফোন নির্ভর যেকোনো আর্থিক লেনদেনের সুবিধা কিংবা দেশের স্বনামধন্য বেশ কিছু ব্যাংকের একাউন্ট ব্যবহার করে সহজেই টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন এবং তাদের মোবাইলে তা সংরক্ষিত থাকবে। মেলায় প্রবেশের সময় মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত এই টিকেটের ইমেজ প্রদর্শন করে একজন ব্যক্তি বা টিকেটে উল্লেখিত সংখ্যক দর্শনার্থী সহজেই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এতে মেলায় প্রবেশের জন্য মেলা প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা থেকে দর্শকরা মুক্তি পাবেন। একই সাথে কাগজ ও ছাপার খরচ পরিহার করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।
প্রথমবারের মতো ই–টিকেট ব্যবস্থাপনা চালু হচ্ছে বিধায় মোবাইল টেলিফোন ছাড়াও কাগজের টিকেট ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের সীমিত সুযোগ রাখা হয়েছে। এই কাগজেও বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কাগজ এবং মোবাইল ফোনে সংযোজিত ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) যাতে কোন অবস্থাতেই বিকৃত বা নকল হতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করছে সরকার স্বীকৃত দেশের অন্যতম সার্টিফাইং অথরিটি রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে কারিগরি সহযোগিতায় রয়েছে জার্মানের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজ। উল্লেখ্য ডিজি ইনফোটেক ও ভেরিডোস বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমূহ ও দুটি স্থল বন্দরে ই–গেইট স্থাপন, ব্যবস্থাপনা ও ই–পাসপোর্ট সেবা প্রদান করার দায়িত্ব পালন করছে।
মেলার প্রস্তুতি দেখতে আসা একদল শিক্ষার্থী বিআরটিসি বাস সার্ভিসের টিকিটের সাথে মেলায় প্রবেশের টিকেট একই পদ্ধতিতে এবং একই কাউন্টার থেকে সংগ্রহের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে বিআরটিসি বাসে ওঠার জন্য যে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয় সেই একই লাইনে দাঁড়িয়ে যদি একই বুথ থেকে মেলার টিকেটও কেনা যায় এবং এক টিকিটেই মেলায় প্রবেশ ও বাসে আসা-যাওয়া করার সুযোগ পাওয়া যায়, তবে তা সকলের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। অন্যদিকে ডিজি ইনফোটেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে তারা দৃঢ়ভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং নাগরিক জীবনে স্বস্তি প্রদানের মত সেবা নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে যেতে আগ্রহী। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সর্বক্ষেত্রে টিকিটের ব্যবস্থা করা গেলে একদিকে কাগজ তথা পরিবেশ সংরক্ষিত থাকবে, আবার অন্যদিকে তা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হবে এবং মূল্যবান সময় বাঁচাবে। পাশাপাশি দুর্নীতি এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রোধ কল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তি বা এই টিকেটিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় । প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন যে, নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই–টিকিটিং এর এসব ইতিবাচক দিক বিবেচনা করে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে ই–টিকেটিং ও ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) সেবা চালু করার সুযোগ প্রদান করবেন। এ বিষয়ে একজন প্রযুক্তিবিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে দুর্নীতি রোধ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ই–টিকেট ও ভিজিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) একটি গেম চেঞ্জার বা মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের দেশেও দুর্নীতি প্রতিরোধ করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ই–টিকেট এবং ভিডিএস হতে পারে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।