১. বাসস থেকে অব্যাহতির দাবি সাংবাদিকদের।
২. সুশীল সমাজের ক্ষোভ ও কড়া সমালোচনা।
৩. জবাবদিহি চাই সমন্বয়করা।
৪. সাধারণ শিক্ষক হয়েও জেলা প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করা দৃষ্টতা।
৫. আ’লীগ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়ার দায় আয়োজকেরঃ বিএনপি নেতা আলাল
ফেনী প্রতিনিধি: (৪ জানুয়ারি,শনিবার)
কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেনীর সন্তান এম সাখাওয়াত হোসেন খানকে ফেনীতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। এই নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সন্তান এম সাখাওয়াত হোসেন খান ২০২৩ সালে কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। তার আগে থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী রাজনীতিতে সংবর্ধিত এম সাখাওয়াত হোসেনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণসহ নানা চিত্র উঠে আসে। এনিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। দলীয় নেতাকর্মীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন এমন কর্মকান্ডে।
যেখানে আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শাহাদাত হোসেনের এমন আয়োজনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করছে অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাহাদাতের কড়া সমালোচনা করে মানিক আলী নামে ব্যক্তি লিখেন, সৈরাচারের দোসরদের পূর্ণবাসনের চেষ্টায় মেতে উঠেছে শাহাদাত। এমপি নিজাম হাজারীর ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামী দুঃশাসনকালে এই শাহাদাতই ফেনীকে নিজের কব্জায় রেখেছিল। নতুন বাংলাদেশে এরা সুযোগ পায় কীভাবে?
নোমান হাবিব নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, এম সাখাওয়াত হোসেন ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থদাতা। কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কাতারে তার বাসায় ফেনী পৌর মেয়রসহ কয়েকজন কমিশনার, যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অবস্থান রয়েছে। আর আমরা তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। কি জবাব দিবেন ৪ আগস্টের বীর শহীদদের? অর্থের কি ক্ষমতা।
জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রাসেল পাটোয়ারী এক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পরিবারের লোককে সংবর্ধনা দিচ্ছে। এসবের ধিক্কার জানাই।’
আলা উদ্দিন নামে আরেকজন লেখেন, ফ্যাসিস্টদের দোসরা এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের সাহস কিভাবে পায়? ‘টাকার বিনিময়ে যদি আওয়ামী দোসররা সংবর্ধনা নেন আর ওই অনুষ্ঠানে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা যায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আওয়ামী দোসরা প্রকাশ্যে খুনখারাপি করেও তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নেই।’
আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএসআর মাসুদ রানা, ফেনী জেলা ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি সামছুল করিম মজুমদার প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মুহাইমিম তাজিম বলেন, এমন আয়োজন নিয়ে আমরা হতাশ। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে তারাও আওয়ামী লীগের দোসর। আয়োজকদের অবশ্যই জবাবদিহি দিতে হবে।
এমন কর্মকান্ডে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনীর এক সিনিয়র সাংবাদিক জানায়, শাহাদাত হোসেন সরকারি চাকুরীজীবি হয়েও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। জেলাতে আওয়ামী দোসরদের পূর্ণবাসনের ষড়যন্ত্রের অংশ এটি। সে (শাহাদাত হোসেন) বাংলাদেশে সংবাদ সংস্থা বাসসের জেলা প্রতিনিধি ও ফেনী আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসার একজন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক। সরকারি নিয়ম তোয়াক্কা না করে শিক্ষক পেশাকে গোপন করেই বাসসের জেলা প্রতিনিধির নিয়োগ হাতিয়ে নেয় তিনি। প্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যে উপস্থিতি হয়ে অন্যান্য দিনের হাজিরায় অবৈধভাবে স্বাক্ষর দিয়ে বেতন উত্তোলন করার অভিযোগ তুলেন তিনি। এছাড়া তিনি আরো জানায়, একজন সাধারণ শিক্ষক হয়েও জেলা প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করা একপ্রকার দৃষ্টতা।
অনুষ্ঠানে অতিথি থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফাউন্ডেশনটির কর্ণধার সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়া মাত্রই আমি মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে পড়ি। আমি অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে যাওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হন। ওই সময়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সংবর্ধিত এ ব্যক্তি ২০১৭ সালে চেক জালিয়াতির মামলায়ও কারাগারে ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি লজ্জিত। যারা এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এটির দায় তাদের নিতে হবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী নেতাকে সংবর্ধনার আয়োজনের বিষয়ে আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন এর কর্ণধার সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন জানায়,
‘সাখাওয়াত তো কাউকে খুন করেনি’ প্রবাসী মানুষ জেলার উপকার করবে তাই সংবর্ধনার আয়োজন করেছি। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা জেলার তেমন কোনো সমস্যার কারণ নয় বলে জানান তিনি।
ফেনীতে আমি নতুন, কাউকে তেমন চিনি না, আয়োজক সাংবাদিক শাহাদাতের একনিষ্ঠ আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল বলে জানায় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।