রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সভাকক্ষে রাজউক এর অঞ্চল ৫ এবং অঞ্চল ৭ এর আওতাধীন এলাকায় অননুমোদিত আবাসিক এলাকাসমূহের পরিকল্পনা অনুমোদনপত্র এবং নকশা অনুমোদন বিষয়ক আবাসন প্রতিষ্ঠান ও মালিকগণের সাথে একটি মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান জনাব মেজর জেনারেল মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ)।
রাজউক অঞ্চল ৫ (ধানমন্ডি- মোহাম্মদপুর) এবং অঞ্চল ৭ (লালবাগ-সূত্রাপুর-কেরানীগঞ্জ) এর আওতাধীন অননুমোদিত পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা কিংবা সমিতির মাধ্যমে উন্নয়নকৃত এলাকাসমূহের পরিকল্পনা অনুমোদনপত্র এবং নকশা অনুমোদন বিষয়ক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ২য় (দ্বিতীয়) সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সংশ্লিষ্ট আবাসন প্রতিষ্ঠান বা মালিকগণের সাথে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজউক এর সদস্য (পরিকল্পনা), সদস্য (উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সদস্য (এস্টেট ও ভূমি), প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান নগর স্থপতি সহ রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভার প্রারম্ভে পরিবেশ রক্ষা ও জলাভূমি সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, “প্রয়োজনে বড় জায়গা নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং সহ ভূমিকম্প রোধী ১০০ তালা বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে, যেন পরিবেশ এর ক্ষতি করে ছোট ছোট ভবন নির্মাণের হার কমে যায় এবং যেন জলাভূমি ভরাট না করে বিদ্যমান আবাসিক জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা যায়। এতে করে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।”
সভায় প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, জনাব মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “DAP অনুযায়ী যেখানে অনুমোদনে বাঁধা আছে, তা অনুসরণ করতে হবে এবং সেখানে অনুমোদন দেওয়া যাবেনা।অনুমোদনের জন্য আবাসিক এলাকার বা প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ নিজস্ব জমি থাকতে হবে এবং ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা মেনে চলতে হবে। একই সাথে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধার উপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।”
এসময় আবাসিক প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতিনিধিরা নিজস্ব জমি থাকার শর্ত ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন। উক্ত সভায় রাজউক সদস্য (উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) জনাব মোহাঃ হারুন অর রশীদ বলেন, ” এ ধরনের অনুমোদনহীন আবাসিক এলাকা উচ্ছেদে আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পালন করতে বদ্ধপরিকর। সে অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে মধুমতি মডেল টাউন উচ্ছেদের জন্য রাজউক নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা এমন কিছু করবো না যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
সভায় রাজউক সদস্য (পরিকল্পনা) জনাব মোহাম্মদ আবদুল আহাদ, এনডিসি বলেন, ” DAP এর পরিবেশ সংক্রান্ত, ইমারতের অনুমোদন বিধিমালার চেকলিস্ট সাইনবোর্ড আকারে বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি ডাটাবেইজ তৈরী করতে হবে। সভায় রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ” গত ৫ মাসে বিধিমালা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। আমরা হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বিধিমালা অনুসরণ করে পরিবেশবিদ এবং নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের সাথে সমন্বয় করে জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। রাজউক তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এ ক্ষেত্রে। অনুমোদনহীন এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা সহ প্রয়োজনীয় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নগরী হিসেবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠার দায়ভার আমাদের সবার। তাই ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের সবাইকেই নিতে হবে। ভবন নির্মাণে কোন ব্যত্যয় ঘটলে বা জলাভূমি ভরাট সহ পরিবেশের কোন ক্ষতি সাধিত হলে রাজউক থেকে উচ্ছেদ সহ বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আজকের সভায় সরকারের খাসজমি সংরক্ষণ, জলাভূমি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার উপরে গুরুত্ব দিয়ে আবাসিক এলাকাসমূহের প্রতিনিধিদের পরিকল্পিত এলাকা গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়। সভায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান ও মালিক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ।