সময়, এক অকথিত স্রোত, যা নিঃশব্দে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষকে। তার মাঝে পহেলা বৈশাখ এক চেতনার ছায়া—যার রূপ নেই, কিন্তু অস্তিত্ব গভীর। এক অভ্যন্তরীণ আর্তি যেন, যা প্রতিবার এই দিনে ফেটে পড়ে রঙ, ধ্বনি আর নীরবতার ভেতর। এ দিন যেন কোনো ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, বরং মনোজগতের এক অন্তঃশ্বাস, যেখান থেকে জন্ম নেয় নবজন্মের আকাঙ্ক্ষা। গ্রীষ্মের আগুনে জ্বলন্ত বাতাসের ভেতরেও এই দিন বয়ে আনে এক অদৃশ্য শীতলতা, যেন আত্মা ধুয়ে যায় প্রাচীন ক্লান্তির কুহেলিকা থেকে। লাল-সাদা রঙ সেখানে আর পোশাক নয়, হয়ে ওঠে এক নিঃশব্দ ভাষা—যা বলে, ‘আমি আছি’, ‘আমি শুরু করছি আবার’, ‘আমি বিস্মরণের ভেতরেও স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখি’। পহেলা বৈশাখে মানুষ গান গায়, মেলা বসায়, মুখে হাসি আঁকে—কিন্তু এর সবই যেন কোনো গভীর অনুক্ত বেদনার প্রতিস্পন্দন। পুরনো বছর চলে যায়, কিন্তু সে রেখে যায় কিছু ছায়া, কিছু অস্পষ্ট উচ্চারণ—যেগুলো নতুন বছরের কানে কানে ফিসফিস করে বলে, ‘তুমি শুরু, কিন্তু আমি নিঃশেষ নই।’ এই দিন তাই উৎসব নয়, বরং উৎসবের মধ্য দিয়ে আত্মার এক আত্মবীক্ষণ। বাংলা, বাঙালি আর বাঙালিত্বের। এমনই বিশ্বাস নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে। সকাল ৯:৩০টায় আনন্দ শোভাযাত্রা। বৈশাখী বৈঠকে বসে পান্তা-ইলিশ, মরিচ-পেয়াজ আর ভর্তা-ভাজির আমেজ। সাথে হাসি-ঠাট্টা, গান-গল্প আর আনন্দধারা—চলে দিনমান ভোর। সময় যেখানে নিজেকে দেখে আয়নায়। আমরা যেখানে নিজের ছায়ার পাশে বসে। নিজেরই কণ্ঠে শুনি নিজের অনিবার্য পুনর্জন্মের গান—সেখানেই পহেলা বৈশাখ তার গোপনতম রূপে জেগে ওঠে। এ এক আশা, এক প্রতিজ্ঞা, এক অন্তর্গত জাগরণ। তবু ফেলে যায় একটা কুয়াশার মতো অনুভব:
‘নতুন কিছু হয়নি, তবু সব যেন নতুন।’