জিএম কিবরিয়া, রাজশাহী:: রাজশাহীর দুর্গাপুরে কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসল পানের স্মরণকালের সর্বনিম্ন দামে উৎপাদন খরচ উঠছে না। পান চাষিরা বরজে নিচ্ছেনা শ্রমিক, করছেনা পরিচর্যা, সংগ্রহ, এমনকি বিক্রি ও বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা। কর্ম হারিয়ে, উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন হাজারো পান বরজ শ্রমিক। পরিবারের জন্য তিন বেলা খাবার যোগাতে দোকান বাকী, ঋণের দারস্থ হতে হচ্ছে তাদের।
বাঙালির আতিথেয়তার অন্যতম অনুসঙ্গ পান। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, বিয়ে-আয়োজন সব শেষে যেন পান থাকতেই হবে। পূর্বে পানের চাহিদা বাজারদর ভালো থাকায় উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষি ভূমিতে পান বরজ গড়ে উঠেছে। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো বরজ শ্রমিকের। প্রবাদে রয়েছে পান বরজ পরিশ্রম ও সাধনার ফসল! নিয়মিত তাকে দেখতে যেতে হবে, অন্যথায় “বড় হয়ে যাবে পড়”। অর্থ কারী এই ফসলের নিয়মিত পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত থাকেন শ্রমিকেরা। নতুন বরজ তৈরী, চালা মেরামত, খুটি গাড়া, পান ধরানো, আগাছা দমন, পান সংগ্রহ, গোছানোর কাজ করে থাকেন এই শ্রমিকেরা। অন্যদিকে বরজ তীরের অন্যতম উপাদান বাঁশের ওয়াসী, খুটি তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাঁশের আড়ৎ। যেখানে প্রতিটি আড়ৎ-তে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন। বাঁশের বিক্রি বন্ধ হওয়াতে তাড়াও বেকার হয়ে পড়েছে।
পানির দামে পান বিক্রি হওয়াতে কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিপুল শ্রমজীবী মানুষেরা। বাজার তদারকির মাধ্যমে সিন্ডিকেট দুর করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে কৃষক শ্রমিকদের রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, উপজেলা জুড়ে ৫৫০ হেক্টর জমিতে পান বরজ রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৮৭৫ টি বরজ থেকে বছরে উৎপাদিত হয় ২১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন পান। যেখানে প্রতিদিন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক।
জয়নগর এলাকার বরজ শ্রমিক মুস্তাফিজুর রহমান জানান, পান এর দাম না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছি ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি এভাবে কয়দিন যাবে জানিনা । দুই একজন কাজে ডাকলেও তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ বরজ ভাঙ্গা শুরু করেছে। অন্য কাজ করার অভ্যাস নেই কি করবো বুঝতে পারছি না? খুবই কষ্টে জীবনধারণ করছি।
নওপাড়া এলাকার বরজ শ্রমিক জয়নাল জানান, এই সপ্তাহে মাত্র একদিন কাজ করেছি। বরজ মালিকদের হাতে টাকা নেই তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে বরজ ভেঙ্গে ফেলছে। অর্থকষ্টে অধিকাংশ বরজ শ্রমিকের জীবন ধারণ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। পানের বাজার ঠিক না হলে পেশা পরিবর্তন করতে হবে।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন (লাবণী) জানান, প্রতিবছর এই সময়ে পানের দাম একটু কম যায়। আবার নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের দিকে পানের বাজারদর ঠিক হয়ে যায়।