বিনয় চাকমা, রাঙ্গামাটি :: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, আমাদের জীবন এখন নিরানন্দময় ও দু:খময় হয়ে উঠেছে। কারন, আমাদের আদিবাসীদের অধিকারকে অস্বিকার ও ভুলন্ঠিত করা হচ্ছে। বিগত ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমাদেরকে আদিবাসী হিসেবে দেওয়া হয়নি সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অনেক সরকার এলো আর গেল, কিন্তু আমাদের জুম্মদের স্বার্থ ও অধিকারের বিষয়ে কোন সরকার কোন কিছুই করেনি।
নিজেদের অস্থিত্ব, আত্মপরিচয়ের অধিকার, সাংবিধানিক স্বীকৃতির অধিকার ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান উষাতন।
গতকাল শনিবার রাঙ্গামাটি পৌরসভা মাঠ প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঊষাতন আরো বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ, আমরা আদিবাসীর অধিকার চাই। বাংলাদেশের সংবিধানে আমাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাই। এ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এখন সরকারের ব্যাপার। বৃহত্তর বাঙালী জনগোষ্ঠীর ব্যাপার। আপনারা বড় জাতি হিসেবে কতটুকু মানুষ, আপনাদের কতটুকু মানবতা আছে সেটি প্রমাণ করবে আমাদের পাহাড়িদের কতটুকু আপন হিসেবে নিবেন এবং অধিকার দেবেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে নেন, আমাদেরকে দূরে ঠেলে দিবেননা, বন্ধু। আমরাও তো বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা ভিন দেশী নই। তাই আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করি। কোন দেশের কোন জাতি-গোষ্ঠীকে পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া যায়না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের শত্রু ভাবা হলে কিংবা সে রকম আচরণ করা হলে এটা কখনও এ দেশের জন্য মঙ্গল হবেনা। আপনারা বুঝবেন সেই আচরণের প্রতিফলনের পরিণতি কি হতে পারে। তিনি অধিকার আদায়ে বৃদ্ধ, যুবক ও তরুণদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক যোগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান উষাতন।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি উপ-সবিচ (অব:) প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, উদ্বোধক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি শিশির কান্তি চাকমা, সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, বাংলাদেশ তংচঙ্গ্যা কল্যান সংস্থার সভাপতি বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, থুয়াইপ্রু খিয়াং প্রমূখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের (পার্বত্য অঞ্চল) ইন্টু মনি তালুকদার।
এরপর আলোচনা সভা শেষে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে শত শত আদিবাসী লোকজন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে বাঁশি, তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিভিন্ন চাকমা গান, উবগীত গেয়ে অংশগ্রহণ করেন।
পরে র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
শেষ——