সাংবাদিকর প্রশ্নের জবাব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পৃথিবীর ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে। পিআরের আবার ছয়টি সিস্টেম আছে। আমরা বলেছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং জনমানুষের আর্থ-সামাজিকের উপযোগী করে যে পদ্ধতিটা এপ্লিকেবল সে পদ্ধতি এখানে চালু করতে হবে। কিন্তু এর মূল ধারণা হচ্ছে নির্বাচনের প্রার্থী দল হয়, কোনো ব্যক্তি নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর আদর্শ, চরিত্র এবং নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা কিভাবে দেশটাকে গড়বে এইসব দিক বিবেচনায় নিয়ে জনগণ দলকে ভোট দিবে। এ পদ্ধতিতে তিন থেকে চারটি লাভ। এই সিস্টেমে ব্যক্তি নয়, দলের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়। ফলে ব্যক্তির স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থটা বড় হয়ে দাঁড়ায়। তখন ভোট নেয়ার ব্যাপারে কালো টাকা, পেশীশক্তি, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হয়। কোনো দল টোটাল কাস্টিং ভোটের এক পারসেন্টও যদি পায় তাহলে তিনশ-এর মধ্যে এক পারসেন্ট মানে তারা ৩টি আসন বা ৩টি সিট পাবে। কোনো দল যদি ত্রিশ পারসেন্ট ভোট পায় তাহলে ঐ দল ৯০টা সিট পাবে। এভাবে দলগুলোর মধ্যে সিট ভাগ করা হবে। অংশগ্রহণকারী দলগুলো নির্বাচনের আগে তিনশত জনের একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিবে। কোনো দল ৩০টি সিট পেলে এই তালিকার প্রথম ত্রিশ জনকে এমপি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তাহলে এখানে ব্যক্তি স্বার্থ থাকলো না, দলের স্বার্থ হয়ে গেলো। কালো টাকা, পেশীশক্তি, মনোনয়ন বাণিজ্যের খেলা আর চলবে না। এ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি ভোটারের ভোটের মূল্যায়ণ হবে। বর্তমান সিস্টেমে যে যাকে ভোট দিয়েছে সে বিজয়ী না হলে ভোটার বলে যে, তার ভোট পঁচে গেছে। পিআর পদ্ধতিতে হলে ভোট আর পঁচবে না। প্রতিটি ভোট মূল্যায়িত হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের অংশীদার নিশ্চিত হয়। এটার নাম পিআর পদ্ধতি।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা লাভ আছে পিআর পদ্ধতিতে, সেটা হলো- কোয়ালিটি সম্পন্ন পার্লামেন্ট গঠিত হয়। দলগুলো তালিকার প্রথম দিকে উচ্চ শিক্ষিত, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোকদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে এবং জাতীয় সংসদ তখন দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ সদস্য পায়। এইভাবে তখন একটি রিচ পার্লামেন্ট গঠিত হয় এবং তারা জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপি অনড় হতে পারে; আমরাও তো অনড়। আমাদের পিআর দিতে হবে। অনেকে বলে পিআর না দিলে কি করবেন। যখন দিবে না তখন সেটার বিষয়ে কথা বলবো। বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘ইভিএমও এদেশের মানুষ বুঝে না, পিআরও বুঝে না।’ অধ্যাপক পরওয়ার এর জবাবে বলেন, এটা একটা আজব ব্যাপারে ইভিএম হলো একটি মেশিনের নাম। এটা ভোট দেয়ার একটা পদ্ধতি। আর পিআর হলো একটা ইলেকশন সিস্টেম। পিআর-এর সাথে মেশিনের তুলনা করা ঠিক নয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাঙ্গালী কী এত বোকা? সবসময় হাইকোর্ট দেখালে কী হয়? এ কারণে আমরা বলি কে অনড় থাকলো আর থাকলো না তাতে আসে যায় না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরেছি। কেয়ারটেকারও আমাদের দাবি একসময় মানতে চায়নি। অনেকে বলেছেন, না, এটা হয় না। কেউ কী নিরপেক্ষ হয়? কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেয়ারটেকারও মানতে বাধ্য হয়েছে। এই জাতি পিআর পদ্ধতিও গ্রহণ করবে। আমরা যে দাবি দিয়েছি এটার উপর অনড় আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথি জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। আল্লাহন ওপর ভরসা রেখে সকল কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে হবে। তাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হবে। সে লক্ষ্যেই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হোক; জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদেরকে ময়দানে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। প্রতিটি ভোটারের কাছে যেতে হবে। প্রার্থীকে এমনভাবে জনগণের সাথে মিশতে হবে যেন প্রত্যেক ভোটার নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই এক নামে চিনতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। এবারের নির্বাচনে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমাদেরকে সেই প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রার্থীসহ সংশিষ্ট দায়িত্বশীল এবং সকল জনশক্তিদেরকে নির্বাচনের কাজে সার্বক্ষণিক ময়দানে সময় দিতে হবে।
১৬ আগস্ট শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীদের করণীয় শীর্ষক ‘লিডারশিপ ট্রেনিং’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। জেলা আমীর আতাউর রহমান বাচ্চুর সভাপতিত্বে জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন এবং অঞ্চল টিম সদস্য মওলানা আশেক এলাহী।
অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর জাকির হোসেন বিশ্বাস, সহকারী সেক্রেটারি আইয়ুব হোসেন খান, আবদুস সামাদ, আবুল বাশার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মওলানা আলমগীর হোসাইন, হেমায়েতুল হক হিমু, জামিরুল হক টুটুল, খিয়াম উদ্দিন, ড. আব্দুস সোবহান প্রমুখ।