ইসলাম বিরোধীদের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ইসলামপন্থীদের আকাশচুম্বী বিজয় হয়েছে নারীদের একচ্ছত্র সমর্থনের কারণে । প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামপন্থীদের এই বিষ্ময়কর বিজয় তাই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
শুধু দেশে নয়। দেশের বাইরেও ইসলামপন্থীদের এই আকাশচুম্বী বিজয় নিয়ে ব্যপক আলোচনা-পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের এই বিজয় ঝান্ডা উড়ানোর পেছেনে সবচেয়ে শক্তিশালী অবদান রেখেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। ডাকসু নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে উঠে আসছে শিবিরের আকাশচুম্বী বিজয়ের পেছনে ঢাকা বিশ্বািবদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের অবিষ্মরনীয় অবদানের চিত্র।
ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীদের নারী ভোটকেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোটের হিসাব দেখে সবারই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। ইসলামপন্থী তথা শিবিরের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের এই সাড়া জাগানো এই নিরঙ্কুশ সমর্থন যেনো এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
জন্মলগ্নের পর থেকেই এখানে প্রায় সব সময় নিষিদ্ধ থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রাণঢালা সমর্থন দিয়েছেন, তা কেউ কখনো কল্পনাও করেননি। বিশেষ করে এখানে নারী শিক্ষার্থীরা এভাবে শিবিরের পক্ষে সমর্থন দিবে,তা কেউ কখনো ভাবেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ইসলামের পক্ষে নারী শিক্ষার্থী তথা ছাত্রীদের একচেটিয়া সমর্থন সবচেয়ে বড় বিষ্ময়ের সৃষ্টি করেছে। যে ক্যাম্পাসে এতোদিন হিজাবী শিক্ষার্থীদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো,সেই ক্যাম্পাসে এভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ইসলামাইজড হয়ে যাওয়া দেখে দেশ-বিদেশের অনেক বিশ্লেষক হতভম্ব হয়ে গেছেন।
এবার ডাকসু নির্বাচনে মোট ৮টি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এরমধ্যে পাঁচ ছাত্রী হলে ছিলেন ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটার।
মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসাররা জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে ছাত্রীদের আবাসিক হলের সংখ্যা পাঁচটি। ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলো হলো-
১.বেগম রোকেয়া হল
২.বাংলাদেশ-কুয়েত-মৈত্রী হল
৩.শামসুন্নাহার হল
৪.বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং
৫.সুফিয়া কামাল হল।
রোকেয়া হলে মোট ভোটার ৫৬৭৬ জন। ভোট কাস্ট হয়েছে ৩৭০৯টি।এরমধ্যে শিবিরের সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪৭২ ভোট এবং ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫৭৫ ভোট। জিএস পদে শিবিরের ফরহাদ ১ হাজার ১২০ ভোট পেয়েছেন ভোট এবং ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৪০২ ভোট।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে শিবিরের সাদিক কায়েম ৬২৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ২১০ ভোট এবং উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ২২৬। জিএস পদে শিবিরের এসএম ফরহাদ ৫৯৫ ভোট এবং ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম ২২৯ ভোট পেয়েছেন।
শামসুন নাহার হলে শিবিরের সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১১১৪ ভোট। ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম আবিদ পেয়েছেন ৪৩৪ ভোট এবং উমামা ফাতেমা ৪০৩ ভোট পেয়েছেন। এই হলে জিএস পদে ছাত্রশিবিরের এস এম ফরহাদ ৮১৪ ভোট এবং ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৩১২ ভোট ।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম পেয়েছেন ৭৪২ ভোট। ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম আবিদ ২২৭ ভোট এবং উমামা ফাতেমা ২২৩ ভোট পেয়েছেন। এই হলে জিএস পদে শিবিরের এসএম ফরহাদ ৫৯৫ ভোট এবং ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম ২২৯ ভোট পেয়েছেন।
সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রশিবির সমর্থিত সাদিক কায়েম ১২৭০ ভোট পেয়েছেন। ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম আবিদ ৪২৩ ও স্বতন্ত্র প্যানেলের উমামা ফাতেমা ৫৪৭ ভোট পেয়েছেন। জিএস পদে শিবিরের এসএম ফরহাদ পেয়েছেন ৯৬৮ ভোট এবং ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৪৪৭ ভোট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রদত্ত এই ভোটের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,শিবিরের বিশাল বিজয়ের পেছনে ছাত্রীদের সাড়া জাগানো সমর্থনই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এটা শুধু ‘ইতিহাসের বাঁকবদল’ কিংবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনেরই আভাস দিচ্ছে না। একইসঙ্গে এটা চব্বিশের রক্তঝরা বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের ‘জনআকাংখা’ বাস্তবায়ন এবং একটি জাতির প্রত্যাশা পূরণেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এফ শাহজাহানের বিশ্লেষণ থেকে সংগৃহীত