জিএম কিবরিয়া, দুর্গাপুর, রাজশাহী :: বিল জুড়ে ফুটে আছে শালুক, সাদা শাপলা বিলে জলের বুক চিরে এগিয়ে চলছে ছোট ডিঙ্গি নৌকা।
শুধু তাই নয় জাল পেতে দেশীয় মাছ সংগ্রহ করছেন জেলেরা। বিলের অপরূপ সৌন্দর্য্যের টানে ছুটে আসছে শত শত দর্শনার্থী তারা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে দিচ্ছেন নানান ক্যাপশন। অপরুপ এই শাপলা বিলের অবস্থান রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা দেবিপুর খুলুপাড়া গ্রামে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির ঢলে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বিলটি । পাশের দ্বারা থেকে অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির শোল, গজার, পুঁঠি, বারিখলসে, দার-কীনা, টাকি, বোয়াল মাছ উৎপাদন হয় বিলটিতে। ছোট নৌকা, তালের ডিঙ্গি নৌকায় করে আবার হাঁটু সমান পানিতে নেমে বিভিন্ন জাল খোলসুন পেতে পাছ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলেরা। আবার শিশু কিশোরেরা শাপলা, ভ্যাট (শাপলার বীজ) শালুক সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। দুর দুরন্ত থেকে গ্রাম বাংলার অপরূপ দৃশ্য দেখতে বিলটিতে আসছেন, কম দামে খুচরা মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহারে হুমকির মুছে পড়ছে মাছের অসংখ্য প্রজাতি।
দেবিপুর এলাকার জেলে জাকির হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমী বিলে প্রচুর পানি হয়। এই পানি নেমে গেলে বিলে আমন ধান চাষ করেন কৃষকেরা। এই বিলটি আমাদের ঐতিহ্য, সব জায়গায় পুকুর খনন করে বীল ধ্বংস করে দিয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে বিলে ঘুরতে আসে ছবি তুলে আমাদের থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়। এটি আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে আগের দিন পেতে রাখা খোলশোলা টির মাছ সংগ্রহ করি। কিছুটা বাড়িতে খাওয়ার জন্য রেখে দেই বাকিটা বিক্রি করি সেই অর্থ দিয়ে জীবন যাপন করি।
স্কুল পড়ুয়া সুজন জানান, প্রতিদিন সকালে বিলে এসে শাপলা ফুল,ভ্যাট ও শালুক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। আমাদের এলাকায় শাপলার তরকারি খুবই জনপ্রিয়। আমাদের বাড়িতেও মাঝে মাঝে দেশি মাছের সাথে শাপলা ফুলের তরকারি রান্না করে খেতে বেশ ভালই লাগে। এই শাপলাগুলো আমাদের থেকে
পাইকারী ক্রেতারা নিয়ে রাজশাহী শহরে বিক্রি করে। শাপলা বিক্রির টাকা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ ও বাকি টাকা দিয়ে হাত খরচ করি।
দর্শনার্থী মো. আল আমিন জানান , এক যুগ আগেও বর্ষা মৌসুম এলে শাপলা ফুল দেখা যেত। এখন আর কোথাও দেখা যায় না। নিচু জমিতে অসংখ্য পুকুর খনন করে আমাদের জীববৈচিত্র্য প্রায় ধ্বংসের পথে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই বিলের ছবি দেখে ঠিকানা সংগ্রহ করে দেখতে এসেছি। কি অপরূপ সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে । মনে পড়ে যাচ্ছে ছোটবেলার শাপলা, শালুক সংগ্রহ করার স্মৃতি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার দাবি বৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হোক ।