জিএম কিবরিয়া, দুর্গাপুর, রাজশাহী :: রাজশাহীর দুর্গাপুরে সুমিষ্ট খেজুর রস সংগ্রহের লক্ষ্যে খেজুর গাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন গাছিরা। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহ আরম্ভ হবে। মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছিরা দড়ি, হাঁসুয়া, ঠুঙ্গি সহ গাছ কাটার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গাছ কাটার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন । রস সংগ্রহের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে খেজুর গাছের চূড়া ঝুড়ে দিচ্ছেন । গাছি বড়ো, বড়ো, হাঁসুয়া দিয়ে খেজুর গাছের মাথার
ডাল কেটে চেঁছে সাদা অংশ বের করছেন। যাকে দুর্গাপুরের ভাষায় বলা হয় গাছ ঝোড়া।
রস সংগ্রহ শুরু হলে গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবারে সকাল শুরু হবে, সুমিষ্ট খেজুর রস সাথে মুড়ি দিয়ে। ঘরে, ঘরে, তৈরি হবে পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়, নানা পদের পিঠাপুলি। গুড় বিক্রি করে সচল হবে, গ্রামীণ অর্থনৈতিক চাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, উপজেলা জুড়ে খেজুর গাছ রয়েছে প্রায়, পঞ্চাশ হাজার ছয়শত পঁচিশ (৫০,৬২৫) টি। বাৎসরিক গুড় উৎপাদন হয় চারশত পঞ্চান্ন (৪৫৫) মেট্রিক টন। গড়ে বছরে প্রতিটি গাছ থেকে ৯ কেজি করে গুড় উৎপাদন হয়। দুর্গাপুরে প্রতি সিজনে ৭০ কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয়।
রবিবার সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কয়েক হাজার গাছি রস সংগ্রহের লক্ষ্যে গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন। গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাটির তৈরী পাত্র ( কোর) সংগ্রহ করে দড়ি লাগাচ্ছেন, পুরনো পাত্রগুলো, ধুয়ে শুকিয়ে রাখছেন। রস জ্বাল দেওয়ার জন্য বড় টিনের পাত্র সংগ্রহ করছেন এবং কাদা, মাটি, দিয়ে চুলা মেরামত করছেন।
উপজেলার হোজা এলাকার গাছি মনোয়ার হোসেন জানান, গত বছর আমি ৪০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেছি। এবারে ৫০ টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবো। প্রতিটি খেজুর গাছ এক সিজনের জন্য ৬০০ টাকা করে টেন্ডার নিয়ে নিয়েছি। গাছ পরিচর্যা করছি, আশা রাখি পর্যাপ্ত শীত পড়লে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহ করতে পারব। নিজে পরিশ্রম মাধ্যমে গুড় উৎপাদন করে প্রতিবছর ভালোই লাভ হয়। আশা রাখি এবারে গুড়ের দাম ভালো থাকবে কৃষকের লাভবান হবে।
উপজেলার রৈপাড়া এলাকার গাছি মনিরুল ইসলাম জানান, আমার প্রায় ৭০ টি খেজুর গাছ রয়েছে। গাছগুলো পরিষ্কার করে রাখছি শুকানোর জন্য। শীত পড়া শুরু হলে, যাতে আগাম রস সংগ্রহ করতে পারি। আমি তেমন বাজারে গুড় বিক্রি করতে যাইনা । চিনি, হাইড্রোজ, মুক্ত গুড় উৎপাদন করি, অনলাইন বিক্রেতারা বাড়ি থেকেই সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গুড় নিতে বাড়ি আসে যা আমার খুবই ভালো লাগে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ তোহিদুর রহমান জানান, খেজুর গাছ পরিষ্কার দক্ষ গাছি দিয়ে করানো উচিত।পরিচর্যার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গভীর করে উভয় পাশের গাছ জোড়া না হয়। এতে করে গাছ মারা যেতে পারে, এক পাশে গাছ জুড়তে হবে।
ভালো রস উৎপাদন পেতে, প্রতিটি গাছের গোড়ায় ১০০ থেকে দেড়শ গ্রাম ইউরিয়া সার বৃত্তাকার ভাবে মাটি খুঁড়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। আশা রাখি আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে। দাম ভালো থাকলে কৃষক লাভবান হবে।