মশিউর রহমান :: টানা তিন দিনের বৃষ্টির পর প্রচণ্ড গরম পড়েছে। সেই সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে। গত পাঁচদিনে ৩৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে বয়স্ক ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ রোগীর বাড়ি জয়পুরহাট পৌরশহরে। স্বজনদের দাবি, পৌরসভার সরবরাহ পানির লাইনে বৃষ্টির পানি প্রবেশের কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়ায়। তবে পূজা উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় খোলা খাবার খাওয়ায় এ অবস্থা,বলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার একদিনে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩৮ রোগী ভর্তি হন।
রোববার ভর্তি হন ১০১ জন। সোম থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হন ১২৯ জন ও বুধবারে সকাল আটটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর এমন চাপে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
মঙ্গলবার দুপুরে ও বুধবারে হাসপাতালে গিয়ো দেখা গেছে, ওয়ার্ডে ঢুকেই দেখা যায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা স্থান সংকুলান না হওয়ায় করিডোর ও মেঝেতে বিছানা পেতেছে। সেখানেই রোগীদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। কথা হয় জয়পুরহাট পৌরসভার মাস্টারপাড়া থেকে আসা রোগী রুবির স্বামী জালাল উদ্দিনের সঙ্গে,তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর স্ত্রীর বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শয্যা না পেয়ে রোগী নিয়ে বারান্দায় বিছানা পেতে থাকছেন।
পাশের শয্যায় ভর্তি থাকা রোগী গোপাল প্রসাদ জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন,তিনি জানান, পৌরসভার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা থাকে। ওই পানি পান করেই তাঁর এ অবস্থা। রোববার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বমি বন্ধ হলেও পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। সেই কারণে বাড়িতেও যেতে পারছেন না। হাসপাতালজুড়ে শুধু ডায়রিয়ারই রোগী।পাঁচবিবির চাটখুর গ্রামের ভর্তি রোগী জহুরার মা হাজেরা বানু বলেন, পূজার মেলার মিঠাই মিষ্টান্ন খাওয়ার পর থেকে তাঁর মেয়ের এ অবস্থা। চিকিৎসা চলছে। এখনও পায়খানা ও বমি বন্ধ হয়নি।অন্যদিকে ক্ষেতলাল উপজেলার দাসরা খান পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আমার ছেলে ডায়রিয়ার সাথে বমি করছে,কী কারনে তা সঠিক বলতে পারছিনা।
জয়পুরহাট সদর হসপিটালের কর্মরত নার্স সাদিয়া ইরা বলেন,হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এতো বেশি কী কারণে এটা আমরা এখনো বুঝতে পারিনি। তবে এর আগেরবার পৌরসভার পানির লাইনে লিকেজ এর কারণেই অনেক রোগীই হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। হাসপাতালের সহকারী চিকিৎসক মো. হারিছ বলেন, পাঁচদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশ রোগীই পৌরসভার বিভিন্ন
মহল্লার বাসিন্দা। তাদের অনেকেই পৌরসভার
পানিকে দায়ী করছেন। পরীক্ষা করলেই বিষয়টি
জানা যাবে। পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ বলেন, অভিযোগের পর আক্রান্ত এলাকা থেকে
পানি সংগ্রহ করে বগুড়ায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা
করা হয়েছে। পরীক্ষায় পানিতে ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া পানির কারণে ডায়রিয়া হলে গোটা পৌরসভার বাসিন্দা আক্রান্ত হতেন। অভিযোগ
সঠিক নয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, পাঁচদিন ধরেই হাসপাতালে
ডায়রিয়া রোগীর চাপ অনেক বেশি। পৌরসভার সরবরাহ পানি ও উন্মুক্ত খাবারের কারণেও ডায়রিয়ার
প্রকোপ বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জয়পুরহাট জেলার সিভিল সার্জন আল মামুনের কাছে জানতে এর কারণ চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ এটি পানি অথবা ভেজাল খাদ্য থেকেই ছড়ায়। ঘটনাটি জানার সাথেই সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সাথে জুম মিটিং করেছি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি পানিরই সমস্যা। পৌর প্রশাসককে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি।