শামসুল আলম ঠাকুরগাঁও :: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয় ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করব । তিনি অভিযোগ করে বলেছেন করেছেন, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার দম্ভে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে দুই হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট ঈদগা মাঠ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেগুনবাড়িতে হামলার স্মৃতিচারণ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে আমার ক্যাম্পেইনে প্রচারের প্রথম দিন আমি বেগুনবাড়িতে এসেছিলাম। আমার গাড়ি যখন ভেতরে ঢুকে তখন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বনি আমিন তার সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে আমার গাড়ি আক্রমণ করে গাড়ি ভেঙে দেয়।
তিনি অভিযোগ করেন, এই সন্ত্রাসের কারণে একসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হতে হয়েছে। এখানে ভিন্ন মত যাদের ছিল বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলাতে জর্জরিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তারা ধান খেতে, আমের বাগানে লুকিয়ে লুকিয়ে রাত যাপন করেছে। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছে,” বলেন তিনি। তবে তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর সেই মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে এবং নেতাকর্মীদের মুক্ত করা হয়েছে।
১১ বার জেলে গিয়েছি, সাড়ে তিন বছর জেল খেটেছি’ দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমরা গত ১৫ বছর ধরে একটা জিনিসের জন্যই লড়াই করেছি সংগ্রাম করেছি আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি। সাড়ে তিন বছর জেল খেটেছি।তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন এই জেল খাটা? নিজেই উত্তর দেন, একটা মাত্র কারণ, ২০২৪ সালে ৫ আগস্টে আমাদের দু হাজার লোককে মেরে ফেলা হয়েছে, আমাদের ছাত্র, কৃষক শ্রমিক শিশু নারী কেউ বাদ যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার এমন দম্ভ যে সে গুলি করে মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকবে। আমরা সেটার জন্য প্রতিবাদ করে আন্দোলন করেছি একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত। বন্ধুগণ ১৫ বছর আমরা একটি জিনিস চেয়েছি যে আমাদেরকে আমাদের ভোটের অধিকারটা দেওয়া হোক।
নিশি রাতের ভোট আর ডামি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, প্রথম নির্বাচনটা ২০১৪ সালে আমরা তো অংশগ্রহণ করিনি। বয়কট করেছিলাম। ওরা (আওয়ামী লীগ) বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১৫৪ জন কে নির্বাচিত করে ফেলেছে। ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় গেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু আগের রাইতোত ভোট চুরি করে নিয়েছে। লোকে বলে ওইটা হলো নিশি রাতের ভোট।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সেটির নাম দিয়েছিলেন আমি আর তুমি ভোট। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইতো ছিল শেখ হাসিনার গণতন্ত্র। আর যত লোকরে পারছে জেলের মধ্যে ঢুকাইছে। ৬০ লক্ষ মানুষকে মিথ্যে মামলা দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থাকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যে মামলায় তাকে জেলে রেখেছে। আমরা বহুবার তাদের কাছে গিয়েছি অন্ততপক্ষে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেন। উল্টো (শেখ হাসিনা) বলছে তাকে নতুন পদ্মা ব্রিজ থেকে টূশ করে ফেলে দিবে।
তবে মুক্ত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সামনে একটাই কথা বলেছেন: প্রতিহিংসা নয়, প্রতিশোধ নয়, আমরা ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করি।
তিনি বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে সবাইকে সমান চোখে দেখাকে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান, কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সাবেক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ ছাড়াই কোনো কাজ হতো না। যা কিছু আছে সবকিছু আওয়ামী লীগ।
‘এখন রাতে আরাম করে ঘুমানো যায়’ আন্দোলনের সফলতা দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা হাসিনাকে সরাতে সক্ষম হয়েছি। হাসিনা পালানোর পর মানুষ একটি শান্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
তিনি উপস্থিত কর্মীদের কাছে জানতে চান, এখন কি রাতে ঘুমানো যায়? নেতাকর্মীরা ‘হ্যাঁ’ সূচক মন্তব্য করলে তিনি বলেন, এখন রাত্রে আরাম করে ঘুমানো যায় অথচ এই ঘুমটা হচ্ছে এখন। তা না হলে আগে কখন পুলিশের বাড়ি শব্দ শোনা যায় কখন মামলা হয়।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম আবুল কাশেম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ সহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা