শামসুল আলম,ঠাকুরগাঁও :: ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ মৎস অভয়াশ্রমে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। খেওয়া জাল,পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে ভোর থেকেই এই এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ।বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পরই মাছ ধরতে নেমে যান শত শত মানুষ। কেউ ভেলায়,কেউ ছোট নৌকায় চলছে মাছ ধরার এক অনন্য প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।
তবে মাছ ধরতে আসা অনেকেই বলেন করে বলেন, এবার যা মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা গতবারের থেকে একটু তুলনায় বেশি। রাত থেকে জাল ফেলেও মাছ ধরছেন কেউ।গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় এবংমাছ ধরা পড়ত, কিন্তু এখন একটু কম । কারেন্ট জাল, রিং জালের কারণে দেশীয় মাছ যেন নদী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মনে করেন মাছ ধরতে আসা সবাই। চদিও চলতি বছর ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও মোঃ খাইরুল ইসলাম দেশিয় প্রজাতির মাছ নিধনে বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ টাকার অবৈধ কারেণ ও রিং জাল ধ্বংস করেছেন। জরিমানা ও সাজাও দিয়েছেন অনেককে।
অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ ক্রয় করতে যাওয়া ক্রেতারা বলেন বাজারে মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তো পাওয়া যায় না, এখানে আজ অনেক মাছ পাওয়া যাচ্ছে যা বাজারের দাম থেকে কিছুটা কম । পুঁটি মাছ,১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। মাগুও ও শিং, টেংরা ৪০০-৬০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০-৭০০ টাকায়, রুই,মিক্রা,১৮০-২০০ টাকায়, তাই অনেক ক্রেতাই মাছ ক্রয় করতে পেরে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এ বাঁধটি। গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে বাঁধের গেট ছাড়ার পর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও ঠাকুরগাঁও সহ আশেপাশের দুই এক জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারও হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।
এই উৎসবে আবার কেবল মাছ ধরতেই সবাই ব্যস্তনেই, কেউ কেউ ব্যস্ত হয়েছেন অন্য কাজেও। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান,খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান।বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।
জানা যায়,বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
ঠাকুরগাঁও ভেলাজান এলাকার আব্দুর রশিদ বলেন ও মোঃ মামুন হেসেন জানান,প্রতিবারে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। এ যেন মাছ ধরার মহোউৎসব পালিত হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে ।
মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েক দিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েক দিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই। যা হোক প্রশাসনের নজরদারিতে এবার এখানকার অবৈধ জাল সব জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।তাই এবার একটু দেশিয় প্রজাতির জালে ধরা পড়ছে।
মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুলশিক্ষক পজিরুল ইসলাম বলেন, আমি ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে নয়টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি,টেংরাসহ অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। এতক্ষণ থেকে যেভাবে খাটনি হয়েছে সেই অনুপাতে কিছুট্ হলেও মাছ পাওয়া পেয়েছি।
শহর থেকে মাছ ক্রয় করতে যাওয়া হিমেল হোসেন বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ বাসায় পছন্দ করে। তাই টাটকা মাছ ক্রয় করার জন্য এখানে সকালেই চলে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মাছ এবার ভালো মাছ ধরা পড়েছে জেলেদের জালে অনেকে র শোল বোয়াল ও ধরা পড়েছে এবার। আর মাছ উঠেছে তার দাম একটু কমই আছে
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পর এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের যে চাহিদা সেটি পূরণ হবে।
জানা যায় যে, এই বুড়িবাধ এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম এই বুড়িবাঁধ অভয়াশ্রমে আশা দর্শনার্থীদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি মৎস চত্তর নির্মাণ করেন।এখানে দেশীয় প্রজাতির মাছ যেন বিলুপ্ত না হয় তার জন্য বুড়ি বাঁধ সহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকার অবৈধ রিং জাল ও কারেন্ট জাল ধ্বংস করেন এবং জরিমানা করেন। এছাড়া মাসখানেক আগে মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা ইয়াসমিন এখানে আসে এই মৎস চত্তরটি উদ্বোধন করে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উপমুক্ত করেন।