আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ :: ময়মনসিংহ নগরীর হেলে পড়া ৫ তলা ভবনটি পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসনসহ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) কর্তৃপক্ষ। এ সময় দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়া এবং হেলা পড়া ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানসহ ৩ ভবন মালিককে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তলব করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর গোলকিবাড়ী বাইলেন কাজী অফিস সংলগ্ন এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ সময় মসিকের সচিব সুমনা আল মজিদ জানান, হেলে পড়া ভবনসহ নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলমমেন্ট এবং পাশের ১৩ তলা ভবনটিও বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি। নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভবনটিও বিল্ডিং কোড না মেনে পাইলিং করার কারণে এই ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে নির্মানাধীন ভবনের প্রইলিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়া এবং হেলা পড়া ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানসহ ৩ ভবন মালিককে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তলব করা হয়েছে। তাদের কাজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে তৎকালীন পৌরসভা থেকে ১৩ তলা ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ি অনুমোদন নেওয়ার ৩ বছরের মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ করার কথা। কিন্তু এখন যে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে এটির অনুমোদনের মেয়াদ প্রায় ৫ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে তাদের কাজপত্রসহ তলব করা হয়েছে।
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম, নকশা অনুমোদন কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো: নেসার আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উম্মে হাবীবা মীরা, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো: জুলহাস উদ্দিন, সহকারি পুলিশ সুপার তাহমিনা আক্তার, প্রকৌশলী মোতালেব প্রমূখ।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা পরিদর্শন টিমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব ঘটনায় আমরা নগরবাসি আতঙ্কিত, যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা। কারণ নগরীর বেশিরভাগ বিল্ডি নির্মাণে মানা হয়নি বিল্ডিংকোড। সরু রাস্তায় দেওয়া হয়েছে ১৩ তলা থেকে ২০ তলা ভবনের অনুমোদন, এসব নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান নিরবতা এবং অবহেলা রয়েছে। কোন ঘটনা ঘটলেই বলা হয় এটি পৌরসভার সময়ে অনুমোদন নেওয়া। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনে বেক-ডেইটে নগরীর বেশিরভাগ ভবনের নক্সার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী দায়িত্বশীল নেতাদের একটি গ্রুপ। ঘটনার বিষয়ে জানতে গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক পক্ষ এবং জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মো: কামরুল হাসান মিলন সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছি। তবে ভবন নির্মাণ কাজ দেখভাল করছেন স্বাপন নামের একজন। তার সঙ্গে কথা বলুন।’ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মো: কামরুল হাসান মিলন ময়মনসিংহ-৬ , ফুলবাড়িয়া আসনে থেকে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে দাড়িয়েছেন।
এরপর ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্বপনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পাচতলা ভবনের মালিক লন্ডন প্রবাসী রিয়াজুল আমিন অরুন ২০১১ সালে হেলে পড়া ৫ তলা ভবনটি নির্মাণ করে বলে জানান তার ভাই ব্যবসায়ি মো: রফিকুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি পাশের স্থানে গ্রীণ ডেভেলপমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানটি বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবনের পাইলিং কাজ শুরু করে। এ কারণে আমাদের ৫ তলা ভবনটি হেলে পড়েছে। একই সঙ্গে ভবনের দেয়ালেও ফাটলের দেখা দিয়েছে। গতকাল সন্ধায় বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করলে তারা সরেজমিনে এসে বেইজমেন্টের কাজ বন্ধ করে দিয়ে আমাদের ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। কখন কী হয়, আল্লাহ ভালো জানেন।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টার দিকে হেলে পড়া ভবনটির দেয়ালে এবং সামনের অংশের মাটিতে দৃশ্যমান ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপরই বিষয়টি টের পেয়ে ভবনের বাসিন্দা মো: রফিকুল ইসলাম ঘটনাটি ফায়ার সার্ভিসকে জানালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে হেলে পড়া ভবনটির পাশে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিং কাজ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে ফায়াস সার্ভিস কর্মীরা হেলে পড়া ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়ে গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।














