শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও – উত্তরের পিছিয়ে জেলাগুলোর অন্যতম ঠাকুরগাঁও ।এ জেলার মানুষের ভাগ্য বদলানোর মত ,এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি ভারী কোন শিল্পকারখানা বা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বৃট্রিশ আমলে গড়ে ওঠা একটি পরিত্যাক্ত বিমান বন্দর ও একটি চিনিশিল্প। বিমান বন্দরটি চালু এখনও ¯¦প্ন হিসেব অধরা রয়েছে ।তাই কৃষিকাজই এজেলার মানুষের একমাত্র আশা ভরসা। কিন্তু সেই কৃষিকাজে কিছুতেই বদলাচ্ছেনা কৃষকের ভাগ্য।অভাব অনটন যেন তাদের সংসারে লেগেই আছে।কারন বাজারে ধান ও গমের ফলন ও দাম কম।বাজারে মৌসুসের শুরুতে ধান ও গমসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের দাম কিছুটা কমে যায়।কৃষকের গলায় যখন ধান থাকে না তখন বাড়ে ধান ও গমের দাম। এভাবে বাজার উঠানামার ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে কৃষিপণ্যের নায্য দাম। এমন কথা বলেছেন অনেক কৃষক।
ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ভুট্টার আবাদ বাড়ছে । ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের জেলায় এবার মোট ভুট্টা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল হয়েছে ৪০ হাজার দুইশ ৪৫০ হেক্টর জমিতে, ঠাকুরগাঁওয়ের জেলায় এবার মোট ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার দুইশ ২৮৫ হেক্টর জমিতে, ধান চাষ করে কৃষক প্রতি বছর তেমন লাভনা হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকের। আমন ধান চাষ করে এ মওসুমে কোন কোন কৃষক তার ধানের চাষে লাগানো পুজি দাড় করতে পারনি। এবার সার, তেল , শ্রমিক খরচ, ও ধানের দাম সব কিছু মিলিয়ে এবারো বেরো ধানের মওসুমে লাভ হবে কিনা এজন্য বোরোধান চাষে অনেক কৃষক অনিহা প্রকাশ করেছে। আখানগর ইউনিয়নের কৃষক মোঃ বদিরুল ইসলাম কি হবে আর বোরোধান, গম চাষ করলেই তেন লাভ নাই। এবার আমি পাচঁ বিঘা মাটিতে উচ্চ ফলনশীল পাইনিয়ার ৩৩৫৫ জাতের ভূট্টা লাগাইছি। ভূট্টার আবাদে ফলন বেশি তাই লাভ বেশি। এক কৃষক জানান, আমাদের এলাকায় কমবেশি ভূট্টা চাষে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
হরিপুর এলাকার কৃষক আজহারুল জানান-আমাদের এলাকায় বেশি ভাগই ভূট্টা চাষ করে আসছেন। শুধু মাত্র রোপা আমন মওসুমে রোপা আমন ধান চাষ করে । বোরো মওসুমে বেশির ভাগ কৃষক ভূট্টা চাষ করে থাকে। ভূট্টা চাষে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি। ১০ নং জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক নরেশ জানায় ধান চাষে তেমন লাভ হয় না। মুখের ভাতের জন্য আমি এক বিঘা(৫০ শতাংশ) বোরো ধান লাগাবো। আমি দুই বিঘা ভূট্টা লাগাইছি। ভূট্টায় ধানের চেয়ে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের নদীপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ দরবুল ইসলাম,জানান ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি । সার, বীজ, ও ,হাল ও নিরানী ইত্যাদি বাবদ খরচ হয়েছে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা । আশাকরি বাজারে ভুট্টা বিক্রীর সময় ভালো দাম পেলে লাভবান হব।একই গ্রামের কৃষক মোঃ লক্ষ্ণ বলেন কিন্তু গত বছর বোরো ধানে লোকসান ও এবার আমন ধানেও তেমন লাভের মুখ দেখতে পারিনি । ভাত খাওয়ার জন্য শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আবাদ করব। বোরো ধান আবাদ কমিয়ে এবার আশা করে ভুট্টা আবাদ করছি। ভুট্টা খরচ অনেক কম। দাম কেমন হবে জানিনা।,আমরা কৃষক কৃষিকাজ ছারা আমরা অন্যকিছু করতে পারি না ,কিন্তু আমাদের কৃষকের লোকসানের দিকে কেউ দেখে না। কিন্তু আমরা যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে ফসল উৎপন্ন করি,অনেক সময় পাই না আমাদের সেই কৃষি পণ্যেও ন্যয্য দাম ।তাই আমাদের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত।
ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া যদিও ভুট্টা চাষের অনূকুলে তবু ও,দাম ্ও ফলন একটু ভালো হওয়ায় এ ফসলটির আবাদ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । গমের তুলনায় ভুট্টা ও মরিচের দামও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল দুটি চাষের দিকে ঝুকছে কৃষক ।গম ও ভুট্টা ,থেকে আট, ময়দা, বিস্কুট, পাউরুটি, ও গবাদি পশুও হাঁস মুরগির বিভিন্ন ফিড তৈরি হয়।যদি ও দেশিয় বাজারে ভুট্টার চাহিদা থাকে তবুও বিদেশ থেকে গম আমদানি করার ফলে দেশিয় বাজারে ভুট্টা ও গমের দাম কম হয়। অন্যদিকে ভুট্টা, দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষক এ ফসলটি চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।যেখানে হেক্টর প্রতি গম উৎপন্ন হয় ৮০-১০০ মন,সেখানে ভুট্টা উৎপন্ন হয় ৩৫০-৫০০ মন।তার্ছাা এ জেলায় অনেক উচু জমিতে মরিচ চাষ হচ্ছে। বিঘা প্রতি মরিচ চাষে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা ।ভালো ফলন হলে বর্তমান দামে তা বিক্রী করা যায় ৫০-৬০ হাজার টাকা।।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে ভুট্টা চাষে প্রশিক্ষন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর কৃষক যে ভুট্টা চাষ করছে কৃষক তাতে লক্ষ্য মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।