শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও :: বিদ্যমান সার নীতিমালা বহাল রাখার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট।
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ,জেলা ইউনিটের সভাপতি মোদাচ্ছের হোসেন। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন বিএফএ ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিটের উপদেষ্টা মো. পয়গাম আলী, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু
।
সংবাদ সম্মেলনে ডিলারদের ৯ দফা দাবিগুলো ছিল:
১)রাসায়নিক সার উত্তোলন, সংরক্ষণ ও বিপণনের বিদ্যমান নীতিমালা বহাল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ডিলারের সংখ্যা বাড়ানো হলে মনিটরিংয়ে জটিলতা দেখা দেবে এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
২)যারা দীর্ঘদিন ধরে ডিলারশিপ পরিচালনা করছেন, তাদের ডিলারশিপ বহাল রাখতে হবে। একই পরিবারের একাধিক সদস্য ভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের শর্ত পূরণ করে ডিলার হতে চাইলে, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।
৩)বিসিআইসি ডিলাররা ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নিয়ম মেনে ইউরিয়া সার সরবরাহ করে আসছেন। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৩৫০ টাকা হলেও বাজারে ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে ১২৯০-১৩০০ টাকায়, যা প্রমাণ করে ইউরিয়ার বাজার স্থিতিশীল। বরং নন-ইউরিয়া সারের বরাদ্দ ৪০–৪৫% কম হওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে।
৪)একজন ডিলারের পক্ষে সব মোকাম থেকে সার উত্তোলন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ সম্ভব নয়। এজন্য মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে উত্তোলন ও বিতরণের সুযোগ থাকতে হবে।
৫)গত ১৫ বছর ধরে প্রতিটি বস্তায় কমিশন ১০০ টাকা নির্ধারিত আছে। অথচ জ্বালানি, পরিবহন, গুদাম ভাড়া ও কর্মচারী ব্যয় প্রায় ৫০% বেড়েছে। তাই কমিশন বাড়িয়ে অন্তত ২০০ টাকা করতে হবে।
৬)ভর্তুকি মূল্যে বিক্রিত সারের ওপর কোনো উৎস কর আরোপ করা যাবে না। এতে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
৭)টিএসপি সারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে, নইলে তা বন্ধ করে দিতে হবে। অল্প বরাদ্দ কৃষকের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি বিসিআইসি কর্তৃক উৎপাদিত টিএসপি ও ডিএপি সার সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নন-ইউরিয়া সার জেলা পর্যায়ে না পারলেও অন্তত বিভাগীয় পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৮) ডিলারের সংখ্যা বাড়ালে প্রতিজনের বরাদ্দ কমে যাবে, তবে খরচ বহুগুণে বাড়বে। এতে লাভ কমে গিয়ে ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই ডিলারের সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে এবং নন-ইউরিয়া সারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৯)নতুন কোনো নীতিমালা প্রণয়নের আগে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের ও বিএফএ প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতায় কৃষক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষির অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হলো রাসায়নিক সার। এই সার সঠিকভাবে কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলাররা গত ৩০ বছর ধরে দায়িত্ব সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই— বিদ্যমান সার নীতিমালা বহাল রাখা হোক। হঠাৎ নীতিমালা পরিবর্তন করলে সার বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং আমরা দীর্ঘদিনের ডিলাররা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হবো।
তাছাড়া ঠাকুরগাঁও একটি কৃষিভিত্তিক জেলা তাই এ জেলায় বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। তাই এই জেলায় বেশি রাসায়নিক সার বেশি বরাদ্দ দেওয়া।
অনুষ্ঠানের বক্তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন, যেন বিদ্যমান নীতিমালাই বহাল থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য ডিলারবৃন্দ ও ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।