আইয়ুব আলী ময়মনসিংহ :: ময়মনসিংহে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের ৩৯ বিজিবি’র উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেছেন, সীমান্তের অতি নিকটবর্তী ১৫০ গজ এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তন এবং সীমান্ত পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিজিবি দীর্ঘদিন যাবৎ সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, বালু পরিবহনের ফলে বর্ডার রোডসহ কাঁচা রাস্তা চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে স্থানীয় জনগণ, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং অসুস্থা বোগীদের জরুরী ভিত্তিতে গমনাগমন সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সীমারেখায় ভূমির অখন্ডতা রক্ষার পাশাপাশি গরীব, দুস্থ ও অসহায় ভূমিহীন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।তিনি আজ দুপুরে বিজিবি মাল্টপারপাস শেড সাংবাদিক সন্মেলনে এসব কথা বলেন । তিনি আরও বলেন, বালুচক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সীমান্তপিলার বিলুপ্ত হয়ে নিজ দেশের সীমানা হুমকির মুখে পড়ছে। বিষয়টি লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গনমাধ্যমের সহায়তা চান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে বিজিবি নিষ্ঠার সাথে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করে থাকে। সাধারনত প্রতিটি বিওপি গড়ে ৫-৮ কিঃ মিঃ সীমান্তবর্তী এলাকা প্রহরা দেওয়া হয়। নতুন সমষ্য সৃষ্টি হয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে । হালুয়াঘাটের বরাক নদীতে ইজারা বর্হিভূত এলাকা থেকে রাতের আধারে বিপুল পরিমাণ বালু কিছু কুচক্রি মহল এবং অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু উত্তেলন করছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডসহ কৃষি জমি, সীমান্ত পিলার, স্থানীয় জনসাধারণের বসতবাড়ীসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখা পরিবর্তিত হওয়াসহ নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইজারা প্রদানকৃত মৌজা নং ১১১ বরাক ঘোসগাঁও হলেও রাতের আধারে স্থান পরিবর্তন করে ইজারাদার কর্তৃক অবৈধ বালু ব্যবসায়িদের সাথে যোগসাজসে ১০৭/১০৮ নং মৌজা হতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি’র যৌথ উদ্যোগে টাস্কফোর্স অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে সীমান্তবর্তী ১৫০ গজ এলাকার মধ্যে ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তন এবং সীমান্ত পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উত্তোলিত বালু বহনকারী যানবাহনে পাচার করা হচ্ছে মাদক, চোরাচালান। বালু পরিবহনের ফলে সীমান্ত এলাকার বর্ডার রোড পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা স্থানীয়দের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত সহ উঁচু নীচু অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় জনগণ, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং অসুস্থ্য রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে গমনাগমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
১ জুলাই হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অবৈধ বালু পরিবহনের দায়ে ০৮টি অভিযানের মাধ্যমে সর্বমোট ২৭ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ এক’শ টি পরিবহন জব্দ করা হয়েছে ফলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপকতা দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
এই প্রেক্ষিতে বিজিবি’র পক্ষ হতে জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং সেখানে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি কেননা এটা বিজিবি’র একার পক্ষে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবনা সমূহ হচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষ হতে বালুমহাল এলাকায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে স্থায়ী পোষ্ট স্থাপন, টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা এবং বালুমহালের সীমানা নির্ধারণকৃত এলাকাটি মজবুত খুঁটির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পতাকা স্থাপন করা। এছাড়াও, অনিয়ম সমূহের সাথে ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করা।