মো: সানাউল্লাহ্ রিয়াদ, বরগুনা:: বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে আখ্যাও দিয়েছে। যা রেড জোন বরগুনা বললে হয়তোবা ভুল হবেনা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বাদ যাচ্ছে না চিকিৎসক, নার্স কিংবা স্বাস্থ্য সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সচেতন মানুষগুলোও। আদরের সন্তানের সামান্য কোনো অসুস্থতাও যেনো পিতা-মাতার পুরো মস্তিষ্কে চিন্তার রেখা জুড়ে দেয়। এরমধ্যে যদি আদরের সেই সন্তানটি ভয়াবহ রূপ নেয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় কাতরায়, তাহলে পিতা-মাতার মানসিক বিপর্জয়তো হবেই। আর অনেকের মতো এই ভয়াবহ ডেঙ্গুতেই প্রাণ গেলো বরগুনা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর সাজিয়া আফ্রিনের মাত্র তিন বছরের শিশু সন্তান সাফোয়ানের। এ যেনো আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পরার মতো অবস্থা।
গত ১৫জুন মাত্র চারদিনের ডেঙ্গু জ¦রের সাথে প্রাণপণ সুস্থ্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন সাফোয়ান। অন্যদিকে, সাফোয়ানের পিতা-মাতাও ছিলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত। একমাত্র শিশু সন্তানটির তৃপ্তির জায়গা থেকে যতœ নিতে না পারাও যেনো হতাশা পিছু ছাড়ছে না এই পরিবারের। তবুও নিরবতায় আচ্ছন্ন মনকে সুস্থ্য করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া সাফোয়ানের মতো আর কোনো শিশুকে যেনো ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে না হয়, তাই ওই সকল শিশু রোগীদের জন্য আইভি স্যালাইন প্রদান করা হয়েছে।
সাফোয়ানের পিতা-মাতার পক্ষে বুধবার (২৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে ২৫০শয্যা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ তাজকিয়া সিদ্দিকার হাতে ২শত আইভি স্যালাইন হস্তান্তর করেন বরগুনা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ মরিয়ম আক্তার খাতুন। এসময় ইনস্টিটিউট এর ইন্সট্রাক্টর বিধান চন্দ্র শীল ও নার্সিং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- ডেঙ্গু মহামারি রূপ নিচ্ছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের মুখে। ডেঙ্গুর প্রকোপ হাসপাতালে বিদ্যমান সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। অপরদিকে, দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালটিতে। এছাড়াও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন- বরগুনাতে ডেঙ্গুর চরম অবস্থা চলমান রয়েছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিন দিন এটি মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।