ঝিনাইদহ – ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই এলাকায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ গাইড বইয়ের গোপন কারখানার সন্ধান মিলেছে। এই গোপন গোডাউন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব গাইড বই। আর এই অনৈতিক কাজ করে ফুলে ফেপে উঠেছে ফকরুল ইসলাম নামে এক অবৈধ ব্যবসায়ী। প্রতারিত হচ্ছেন দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটনাটি ঘটছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই!
এদিকে ঝিনাইদহ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. শাহনাজ ফেরদৌস জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে জড়িতরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। ঝিনাইদহ জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে আলিশান চারতলা বাড়ির নীচতলায় এই আন্ডারগ্রাউন্ড গোডাউনের অবস্থান। সেখানে হাজার হাজার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ গাইড বই তৈরি করা হচ্ছে।
মিরাজ নামে একজন গোডাউন পাহারা দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে ম্যানেজার বলেও দাবি করেন। জানতে চাইলে মিরাজ জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড ঢাকা থেকে ছাপানো হয়। তারপর ঝিনাইদহের গোডাউনে বাধায় করে লেবেল লাগানো হয়। দেশের লাইব্রেরিগুলোর চাহিদা মত কুরিয়ার সার্ভিস যোগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নোট গাইড বা সহায়ক বই প্রকাশ করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ঝিনাইদহ কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. শাহনাজ ফেরদৌস জানান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোট গাইড, সহায়ক পুস্তুক প্রকাশের জন্য দেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি প্রদান করা হয়নি।
এ ধরণের কর্মকান্ড শুধু বেআইনি নয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল লক্ষ্যর প্রতি এক ধরণের হুমকি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। শনিবার সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই মোড়ে মসজিদে সাদাতিয়ার সামনে চারতলা ’ব্যতিক্রম’ ভবনের মালিক সদর উপজেলার বেড়াশুলা গ্রামের ফকরুল ইসলাম। সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড রুমে হাজার হাজার কপি গাইড বই মজুদ রয়েছে। অবৈধ এসব বই বিক্রির টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন ফকরুল। অল্পদিনে ফুলে ফেপে ওঠা ফকরুল ইসলাম এক সময় আত্ম-বিশ্বাস নামের একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। এনজিওর চাকরি ছেড়ে তিনি নোট বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা থেকে ছাপা শুরু হয় নোট বই আর গাইড। ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোটা দেশে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহের এক পুস্তক ব্যবসায়ী জানান, শুধু ফকরুল নয় সারা দেশে নোট গাইড বিক্রি জন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা লগ্নিও করছে। এদিকে ফকরুল ইসলাম দাবি করেন বই গুলোর পান্ডুলিপি তিনি নিজে তৈরি করেন এবং ঢাকার প্রেস থেকে ছাপানো হয়। তার দাবি ট্রেড লাইসেন্স আর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির কার্ডের ক্ষমতা বলে দীর্ঘ দিন তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড প্রকাশ করে আসছেন।
ঝিনাইদহ পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সংগঠনিক আহবায়ক ইনজামুল হক জানান, বোর্ডের বই ব্যাতিত নোট গাইড ছাপানো ও বিক্রির বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বা গাইড সহায়ক বই বিক্রির জন্য কোন নির্দেশনা নেই। ফকরুল ইসলাম কিভাবে নোট গাইড বা সহায়ক বই ছাপাচ্ছে এবং বিক্রি করছে তা তাদের অজানা।
খাইরুল ইসলাম নিরব/