কুষ্টিয়া- গত ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো কুষ্টিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত পাঁচ মাসে শিশুসহ ২৩ টি লাশ উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ এতে করে প্রমান হয়েছে ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অফ কমান্ড পরিস্থিতিও। উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে হত্যা গুম চাঁদাবাজি অপহরণ ও মুক্তিপণাদায়। বালি মহল দখল, হাট বাজার দখলসহ নানা অপকর্মের ফলে এ জেলার মানুষ চরম আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনী পরিচালিত বিশেষ অভিযান (ডেভিল হান্ট) যা গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়। এ অভিযানেও কোন কাজ হচ্ছেনা। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে একর পর এক নানা ধরণের অপরাধ।
বিশেষ এই অভিযানের পর থেকে কুষ্টিয়ায় দিনের পর দিন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে হত্যা, ছিনতাই, লুটপাট, ডাকাতি, দখলদারিত্ব সহ নীরবে চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ড। একেবারে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। প্রায় প্রতিদিনই অজ্ঞাত স্থানে মিলছে লাশের সন্ধান। এছাড়াও ছোটখাটো বিষয় নিয়েও দুই পক্ষ জড়াচ্ছে সংঘর্ষে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই পরিত্যক্ত অবস্থায় কুষ্টিয়াতে ৪ টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফেব্রুয়ারিতে ডেভিল হান্ট কার্যকর অবস্থায় এ জেলায় ৬ টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ, এছাড়াও ভেড়ামারার পদ্মারচর থেকে একজন মহিলার লাশ উদ্ধারসহ কুমারখালীতে এক মহিলাসহ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত পাঁচ মাসের বেশি সময়ে কুষ্টিয়ায় অন্তত ২৩ টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, একই এলাকায় আপন দুই ভাই ও এক জামায়াত নেতাকে কুপিয়ে খুন, এবং পদ্মায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার হত্যার ঘটনা বেশ আলোচিত। শুধু হত্যার মাধ্যমে থেমে নেই অপরাধ কর্মকন্ড, দৌলতপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে এক তরুণকে হত্যার ঘটনার জের ধরে চলতি মাসের ১২ ফেব্রুয়ারী ভোররাতে দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া পদ্মার চরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রতিপক্ষের ৪৬টি মহিষ লুট করা হয়।
কুমারখালীতে প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের ২২ টি দোকানসহ মার্কেট দখল করেন উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, ভুক্তভোগী তার মার্কেট উদ্ধারে প্রশাসনের সর্ব মহলে দৌড়ঝাঁপ করেও তাদের কাছ কোনো সহযোগিতা পাননি, মার্কেটের মাসিক ভাড়া প্রায় ৭০ হাজার টাকা তুলছেন দখলদার হান্নান। এছাড়াও একাধিক মার্কেট, দোকান, অফিস, ফাকা জমি দখলের অভিযোগ তো রয়েছে অহরহ। এছাড়া দিনে দুপুরে চলছে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি, গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস প্রাঙ্গণে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা সীমানা প্রাচীরের পেছনে গড়াই নদীর দিক থেকে এসে গুলি করে আবার ওইদিক দিয়েই পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের উপর অধিপত্য বিস্তার করতে একটি মহল এমন কাজ করেছে।
১৮ ফেব্রুয়ারী রাত ১১ টার দিকে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া গড়াই নদের বালুঘাটে ১০ থেকে ১২ জনের একদল অস্ত্রধারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়, সে সময় অস্ত্রধারীরা এলোপাতারি গুলি চালালে ওই ঘাটের ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সবুজ আলী (৪২) গুলিবিদ্ধ হয়। সেসময় বালুঘাটের প্রায় ২ লাখ টাকা নিয়ে যায় সন্ত্রাসী দল। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সীমান্ত এলাকায় ট্রিপল মার্ডারের মতো ঘটনা। রাত ১১ টার দিকে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা হানিফসহ তিনজনকে হত্যার পর হত্যার দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠায় চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনী চরমপন্থি নেতা কালু।
এমন ভয়াবহ অবস্থায় কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষসহ সরকারি অফিস আদালত, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সবখানে আতঙ্ক ও অনিরাপত্তার সাথে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যার্থতারও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া কোনভাবেই মানুষ নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন সচেতন সমাজ।
অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃংখলার অবনতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ (প্রশাসন ও অর্থ) আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি, বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং জন নিরাপত্তায় আমরা সর্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি ।
নাদিয়া ইসলাম মিম